‘ফল’ দিয়ে নানা রকমের রূপচর্চা

সারা বছরই কোন না  কোন ফল পাওয়াই যায়। আর আমি ?  ফল যে শুধু খাবো আর মুখে লাগাব না, সে তো হতেই পারে না। ঘরে যখনই ফল আনি খাওয়ার পাশাপাশি সামান্য একটু মুখেও লাগিয়ে নেই।

শরীরের পুষ্টির প্রয়োজন পূরণে তো বটেই, ত্বকের যত্নে রূপচর্চায়ও জুড়ি নেই ফলের। খুব সহজ লভ্য কিছু ফল দিয়ে ত্বকের যত্ন কিভাবে করা যায় আসুন তা জেনে নেই:


রুপচর্চায় কলার নানান কলা 

সারা বছরই কলা বাজারে পাওয়া যায়।  রূপচর্চায় কি ত্বক কি চুলের যত্নে কলার জুড়ি মেলা ভার। কলা এমন এক ময়শ্চারাইজিং এজেন্ট, যা ত্বকে অ্যালার্জি তৈরি করে না। কিন্তু প্রভাব থাকে বহুদিন।

ত্বকের রুক্ষতা দূর করতে কলার একটি দারুন প্যাক রয়েছে। এই প্যাকটি বানানোর জন্য একটি কলা কেটে তার সঙ্গে মধু, লেবুর রস ও দুধ মিশিয়ে মুখে, হাতে ও পায়ে লাগালে ত্বকের রুক্ষতা দূর হয়
আজকাল আমরা আমাদের চুলে নানা রকমের কেমিক্যাল কালার লাগিয়ে থাকি। কেমিক্যাল লাগানোর ফলে চুল রুক্ষ হয়ে উঠে। কেমিক্যাল ট্রিটমেন্টে যাদের চুল রুক্ষ হয়েছে, তারা উপরের এই মিশ্রণ চুলে লাগালে চুলের রুক্ষতা দূর হবে এবং এই প্যাকটি কন্ডিশনার হিসেবেও কাজ করবে।
এই গ্রীষ্মে ত্বক রোদে পুড়বে, ধুলোবালি জমবে। ঝটপট ক্লিনজার হিসেবে পাকা কলা চটকে নিয়ে মুখে মাখতে পারেন, ত্বক টানটান হবে। অর্ধেক পাকা কলা, দুই চা-চামচ মধু ও এক চা-চামচ চন্দনের গুঁড়া ২০ মিনিট মুখে লাগিয়ে হালকা গরম জল দিয়ে ধুয়ে নিলে দূর হবে ত্বকের কালো ছোপ।

তরমুজে ঠান্ডা সতেজটা

ত্বক সতেজ রাখতে তরমুজ তুলনাহীন। স্ক্রাবার হিসেবে তরমুজের ব্যবহার অসাধারণ। প্রথমেই যা করনীয় তা হল তরমুজ ব্লেন্ড করে নিন। এবার এতে কয়েক ফোঁটা মধু ও চালের গুঁড়া মিশিয়ে বানিয়ে ফেলুন স্ক্রাবার। এই বার এই স্ক্রাবার দিয়ে মুখ ত্বক ও শরীরে ঘষে পরিষ্কার করুন। তারপর জল দিয়ে ভালোভাবে ধুয়ে ফেলুন। এর ফলে লোমকূপ থেকে বের হয়ে আসবে সারা দিনের জমে থাকা ধুলো-ময়লা।



রোদে পোড়া দাগ দূর করতেও জুড়ি নেই তরমুজের। তরমুজ হালকা চটকে ফ্রিজে রাখুন। বাইরে থেকে বাড়ি ফিরে রোদে পোড়া অংশে ভালো করে লাগান। ১৫ মিনিট রেখে ধুয়ে ফেলুন। নিয়মিত ব্যবহার করলে দূর হবে রোদে পোড়া দাগ।

 তৈলাক্ত ত্বকের জন্য শসার রসের সঙ্গে তরমুজের রস মিশিয়ে মিশ্রণ তৈরি করুন১৫ মিনিট মুখে মেখে রেখে ঠান্ডা জল দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। উপকার পাবেন। তরমুজের রস ডিপ ফ্রিজে রেখে বরফ বানিয়েও মুখে ঘষতে পারেন। নিমেষেই ত্বক হবে সতেজ, সুন্দর আর উজ্জ্বল


পেঁপের মুখোশ সবার জন্য

ত্বক কোমল ও উজ্জ্বল করতে ব্যবহার করতে পারেন পেঁপে। বিশেষত মাস্ক তৈরিতে পেঁপে অতুলনীয়। আধা কাপ পাকা পেঁপে, ৪ টেবিল-চামচ নারকেলের দুধ এবং ১/৪ কাপ কর্নফ্লেক্স একটি পাত্রে চটকে নিয়ে মাস্ক তৈরি করুন। মুখ, হাত এবং গলায় মেখে ৫ মিনিট স্ক্রাব করুন। শুকিয়ে এলে জল দিয়ে ধুয়ে ময়শ্চারাইজার লাগিয়ে নিন। অথবা আধা কাপ পাকা পেঁপে, ৪ টেবিল-চামচ কমলার রস, ৪ টেবিল-চামচ গাজরের রস এবং ১ চা-চামচ মধু একসঙ্গে মিলিয়ে ত্বকে মেখে কিছুক্ষণ রাখুন। সব ধরনের ত্বকেই পেঁপের মাস্ক ব্যবহার করতে পারেন।



বাঙ্গি রূপের সঙ্গী

বাঙ্গিকে বলা চলে প্রাকৃতিক ব্লিচ। ত্বকে ফেয়ার পলিশের কাজ করে বাঙ্গি। দূর করে কালো ভাব। কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ছাড়া। বাঙ্গির সঙ্গে টকদই মিশিয়ে দিলে তা কাজ করবে ক্লিনজার হিসেবে। ত্বক উজ্জ্বল করতে মটর ডাল বাটা, সয়াবিন অথবা চালের গুঁড়া কিংবা ময়দার সঙ্গে বাঙ্গি মিশিয়ে মাস্ক তৈরি করুন। একটু ম্যাসাজ করে ১০-১৫ মিনিট রেখে ধুয়ে ফেলুন। ত্বক পরিষ্কার ও ত্বকের ভাঁজ পড়া কমাতে বাঙ্গির শাঁস, মটর ডাল বাটা, ডিমের কুসুম, কয়েক ফোঁটা লেবুর রস ও মধু একসঙ্গে মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করন। শুকিয়ে যাওয়া পর্যন্ত মুখে লাগিয়ে রাখুন। এবার পানি দিয়ে ধুয়ে নিন। সপ্তাহে তিন দিন ব্যবহার করবেন। নিয়মিত ব্যবহারে ত্বকের ভাঁজ পড়া ভাব কমবে। ত্বক হবে সতেজ।


ডাবে হবে দূর দাগ

চুলের জন্য যেমন নারকেল, ত্বকের জন্য তেমনি উপকারী কচি ডাব। প্রতিদিন দুটো ডাবের জল খেলে করলে কমনীয়তা বাড়ে ত্বকের। নিয়মিত কচি ডাবের জল দিয়ে মুখ ধুলে বসন্তের দাগও দূর হয়। শুধু বসন্ত নয়, ব্রণের দাগও দূর করা যায় ডাবের জলে ধুয়ে। একটু তুলো ডাবের জলে ভিজিয়ে মুখে লাগান। শুকোতে দিন। তারপর হালকা ম্যাসাজ করুন। এতে মুখে সুন্দর উজ্জ্বল ভাব আসবে। ত্বক হবে কোমল ও মসৃণ। ডাবের জল দিয়েও তৈরি করে রাখতে পারেন বরফ।


লেবুর জাদু

গরমে রূপচর্চায় লেবু যেন প্রকৃতির আশীর্বাদ। প্রাচীন মিসর ও গ্রিসের রাজকুমারীদের কাছে লেবু ছিল রূপচর্চার বিশেষ উপকরণ। আমাদের দেশি লেবু পেডিকিউর মেনিকিউরের অপরিহার্য উপাদান। নখের হলুদ ছোপ তুলতে, কনুই, হাঁটুর কালো দাগ তুলতে লেবুর ওপর চিনি ছড়িয়ে ম্যাসাজ করুন। দাগ ছোপ মুছে যাবে। ত্বকের ক্ষত পূরণেও লেবু ভারী কার্যকর। একটু চিনি ছড়িয়ে ম্যাসাজ করতে হবে শুধু। লেবুর সঙ্গে মধু মিশিয়ে পায়ের পাতায় মেখে পাঁচ মিনিট পর ধুয়ে ফেলুন। কোমল হবে পায়ের পাতা। তবে নখ বাদে ত্বকে কখনো সরাসরি লেবুর রস লাগাবেন না। লেবুর এসিডিক উপাদানে ত্বকের ক্ষতি হতে পারে। তাছাড়া চুলের চকচকে ভাব ফিরিয়ে আনতে লেবুর জুড়ি মেলাভার।



আনারসেও রূপ রস

রূপচর্চায় আনারসের ব্যবহার জনপ্রিয় নানা দেশে। আমাদের দেশেও এই ব্যবহার বাড়ছে নিত্যদিন। আনারস ত্বকের মৃত কোষ, ধুলাবালি ও তেল সহজেই বিদায় করে। আনারসের স্ক্রাব তৈরি করে ব্যবহার করতে চাইলে চার টুকরো তাজা আনারস, আধা কাপ টিনজাত আনারস এবং তিন চা-চামচ জলপাই তেল একত্রে ব্লেন্ড করে মাস্ক তৈরি করুন। মুখে ১৫ মিনিট রেখে ধুয়ে ফেলবেন। আনারস, লেবু ও কমলার রস একসঙ্গে মেশান। সঙ্গে নিন অল্প ময়দা। পেস্টটি মুখে লাগান। শুকিয়ে গেলে ধুয়ে ফেলুন। আনারসের যে প্যাকই ব্যবহার করুন, মুখ পরিষ্কার করার পর অবশ্যই কোনো ময়শ্চারাইজার মাখতে হবে। নইলে ত্বক শুষ্ক হয়ে যেতে পারে।

টিপস : ত্বকে সরাসরি কখনই বরফ লাগাবেন না। এতে ত্বকের শুষ্ক হয়ে যাওয়ার সম্ভবনা থাকে। তাই ত্বকে বরফ লাগানোর সঠিক পদ্ধতি হল, বরফের টুকরো একটি সদা পরিষ্কার সূতির কাপড়ে নিয়ে ত্বকে আলতো ভাবে চেপে চেপে লাগাতে হবে।

                               আপনি আপনার মতামত Facebook এও দিতে পারেন।