আপনি কি কোভিড -১৯ এর দরুন বিষন্নতায় ভুগছেন? দেখে নিন বিষন্নতা দূর করার কিছু উপায় !


আপনি কি কোভিড -১৯ এর দরুন বিষন্নতায় ভুগছেন? দেখে নিন বিষন্নতা দূর করার কিছু উপায় !

লিখছেন প্রিয়াঙ্কা চক্রবর্তী 



১৪ই জুন ২০২০, দুপুরের দিকে যখন শুনলাম অভিনেতা সুশান্ত সিংহ রাজপূত আর নেই, আমি যেন খবর টা ঠিক বিশ্বাস করে উঠতে পারছিলাম না৷ যে অভিনেতাকে আমরা সবসময় টিভির পর্দা এ হাসি খুশি দেখেছি, সে হটাৎ করে আত্মহত্যা করলো? এইটা মেনে নিতে পারছিলাম না... পরে জানতে পারলাম তিনি নাকি বেশ কিছুদিন যাবৎ মানসিক বিষন্নতায় ভুগছিলে ৷ তখনি মনে হলো এই বিষয়টা নিয়ে কথা বলাটা খুবই  জরুরী৷ 
আমাদের আশেপাশে হয়তো এমন অনেকেই আছেন যাদের দেখতে তো বাইরে থেকে খুবই  চনমনে, হাসিখুশি লাগে। কিন্তু তাদের মনে ভেতর যে কি চলছে সেটা আমরা হয় তো বুঝতেই পারবো না, বা অনেক সময় বুঝেও পাত্তা দেই না। মনের অসুখটা দেখা যায় না বলে এর গুরুত্বটাও আমাদের মতো সাধারণ মানুষের অনেক কম। আমরা ভাবি এটা  সাময়িক, একটা সময়  ঠিক হয়ে যাবে। অনেক ক্ষেত্রে সেটা আর হয় না৷ 
তার উপর এই কোভিড-১৯ এর দরুন, প্রতিটি মানুষের মধ্যে মানসিক বিষন্নতা খুবই বেড়ে গেছে। দীর্ঘ লকডাউন এবং তার ফলে সবার মধ্যে যে অনিশ্চয়তা, তা মানসিক বিষন্নতাকে আরো বাড়িয়ে তুলেছে। 
আজ আমি আপনাদের সাথে শেয়ার করবো এই কোরোনার দরুন মানসিক বিষন্নতার কি কি কারণ হচ্ছে  এবং সেগুলোকে সরিয়ে উঠবেন কিভাবে৷ 

মানসিক বিষন্নতার কারণ:

রোগটা নিয়ে ভয়: হটাৎ করে একটা ভাইরাস দুনিয়াটাকে ওলোট পালট করে দেবে, সেটা আমরা কেউ ভাবতেও  পারিনি৷ এই নতুন অসুখের কি যে উপসর্গ, আর তা থেকে ভালো থাকার উপায়, সেটা নিয়ে আমরা সকলেই  অনিশ্চিত। আর তার ফল, বাড়ছে বিষন্নতা৷
চারিদিকে অনিশ্চয়তা: লকডাউনেই সঙ্গে কোনোদিন আমাদের পরিচয় ছিল না। এখন এই লকডাউনেই আমাদের জীবনের সঙ্গী৷ কবে যে সবকিছু ঠিক হবে, কবে আগের মতো আমরা ভয় ছাড়া বাড়ির বাইরে বেরোতে পারবো, তার কোনো ঠিকঠিকানা নেই।  এটাও বাড়িয়ে দিচ্ছে বিষন্নতা ৷
আর্থিক অনিশ্চয়তা: কোভিড-১৯ এর ফলে অনেকেই নিজের চাকরি হারিয়েছিলেন, কারো বা টাকা কমে গেছে, যারা চাকরি বদলানোর কথা ভাবছিলেন, তাদের মাথায় আকাশ ভেঙে পড়েছে৷ অনেক পরিবার আজ আর্থিক অনিশ্চয়তা মধ্যে দিয়ে দিন কাটাচ্ছেন। এটাও আজকের পৃথিবীর প্রতিটি  মানুষের মধ্যে অবসাদের একটি খুব বড় কারন। 
ঘরে অশান্তি: বাড়ির সবাই ঘরে থাকলেও সবার মধ্যে একটা চাপ কাজ করছে এই লকডাউন এর দরুন এবং তার জন্যে অনেকের এই সময় চলছে ঘরে ভালোরকমের অশান্তি৷ আর এই অশান্তি যদি দিনের পর দিন চলতে থাকে, সেটা থেকে মন খারাপ থাকাটা অস্বাভাবিক কিছু না৷
বড্ডো বেশি কাজের চাপ: অনেকের চলছে ওয়ার্ক ফ্রম হোম,যাতে কাজ বেশি, বইকি কম না৷ সামলাতে হচ্ছে বাড়ির কাজ এবং অফিসের কাজটাও৷ বেড়ে যাচ্ছে কাজের চাপ আর তার সঙ্গে শরীর ও মন উভয় সমান ক্রান্ত। তবে ক্রান্তির ছাপটা মনের উপরেই বেশি পরে৷

কিভাবে বিষন্নতার মোকাবিলা করবেন:

শরীর, যেটা আমাদের সবচেয়ে বড় সঙ্গী, সেদিকে খেয়াল রাখুন: রাতে কম করে ৭ থেকে ৮  ঘন্টা ঘুমানোর চেষ্টা করুন। ঘুমের সাথে মানসিক ভারসাম্য অনেকটাই জড়িয়ে৷ ভালো খাবার দাবার খান, ভালো বলতে যেমন, ব্যালান্সড ডায়েট৷ শরীরকে ঠিক রাখতে গেলে করতে হবে ব্যায়াম। এখন এই লকডাউনে বাড়িতে এ যোগব্যায়াম, প্রাণায়াম, ধ্যান এ সব করুন নিয়মিত ৷ দেখবেন , শরীর তো  ভালো থাকবেই , সাথে মনও হালকা থাকবে ৷
খবর দেখুন ঠিক জায়গা থেকে: কোভিড -১৯ এর বিষয়ে ডেইলি নতুন নতুন খবরাখবর জানার জন্য আমাদের চোখ রাখতে হয়, বিভিন্ন নিউজ চ্যানেলের উপর। তবে সব সময় সব খবর বা তথ্য যে  নিউজ চ্যানেলের  সঠিক পরিবেশিত হচ্ছে তা কিন্তু ঠিক না। তাই খবরের উৎস অথেন্টিক হয় চাই। কাজেই, চেষ্টা করুন কোনো নির্ভর যোগ্য  উৎস থেকেই তথ্য জোগাড় করবার।হুজুগের বসে কোন গুজবে কান দিয়ে শুধু শুধু আতঙ্কিত হবেন না। 
লোকজনের সাথে কথা বলুন: মনে রাখবেন, কথা বলে, মনের কথা কাছের মানুষের সাথে আলোচনা করেই কিন্তু মন ভালো থাকবে৷ এই লকডাউনের দরুন সবাই যখন বাড়িতে আছেন, সেটাকে উপভাগ করুন, পরিবারের সক্কলের সাথে একসাথে বসে কথা বলা, গল্প করার মজাটাই আলাদা৷
বানিয়ে নিন নিজের একটা রুটিন: নিজেকে কাজের মধ্যে ব্যস্ত  রাখাটা খুবই জরুরি, কিন্তু সেটা যেন এমন না হয়ে, যে আপনি নিজের জন্যে সময় পাচ্ছেন না৷ কাজেই বানিয়ে নিন একটা নিজস্ব রুটিন৷ তাতে অবশ্যই  রাখবেন নিজের জন্যে আলাদা করে সময়। এই সময়টিকে কাজে লাগিয়ে আবার নতুন করে নিজের শখকে খুঁজে নিতে পারে। এছাড়াও  নিজের কাছের মানুষদের সঙ্গে কথা বলা বা সময় কাটানো ইত্যাদির জন্যও সময় করে নিন। 
ডাক্তারের পরামর্শ নিন: মানুষিক রোগের ডাক্তারের কাছে যাওয়া মানে কিন্তু আপনি "পাগল" সেটা একদমই  ভাববার বিষয় নয়।  এই ধারণাটা অনেকেরই আছে। সেটা দূর করুন৷ জ্বর হলে যেমন আমরা ডাক্তারের কাছে যাই , তেমনি মানুষিক বিষন্নতাতেও মনোরোগের ডাক্তারের কাছে যাওয়াটা খুবই স্বাভাবিক৷ কাজেই দরকার পরলে ডাক্তারের কাছে অবশ্যই যান৷

মনে রাখবেন, শরীরের মতোই মন ভালো থাকাটাও অত্যন্ত জরুরি, আর তার জন্যে যা করণীয় প্রয়োজন তা  অবশ্যই করবেন৷ যিনি মনোরোগে ভুগছেন তার পরিবারের সদস্যদের ভূমিকাও অনেক বেশি। এই রোগকে গুরুত্ব দিন এবং যিনি এই রোগে আক্রন্ত তাকে কাছে টেনে নিন।

এই মহামারীর পরিস্থিতি,  আজ আছে, কিছুদিন, কিছু মাস পরে চলে যাবে, তাই বলে এই কঠিন পরিস্থিতি যেন কোন ভাবেই আপনার মনকে প্রভাবিত করতে না পারে। সেটার কদর করুন, ফল আপনি নিজেই পাবেন!


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ